ক্যানাডায় ইসলাম চর্চা
Spirituality বা ধর্ম চর্চা আমাদের মানুষিক ভাবে অনেক সাহায্য করতে পারে। আমাদের বেটার হিউম্যান বিং হিসেবে গড়ে উঠতে সাহায্য করতে পারে। মাসজিদ থেকে ভেসে আসা আযানের ধ্বনি সর্বশেষ শুনেছিলাম ৪ বছর আগে, ইস্তানবুলের ব্লু মাসজিদ থেকে। সেই আযান এতটাই মায়াময় ছিল যে আপনাকে মন্ত্র মুগ্ধের মতন মসজিদের দিকে টেনে নিয়ে যায়। এত সুমধুর আযান আমার জীবনে আর কোথাও শুনা হয়নি। ক্যানাডাতে মাইকে আযান দেওয়া যেহেতু পারমিশন নাই, আমাদের মোবাইলের অ্যাপ এর উপরে নির্ভর করতে হয়। ক্যানাডাতে মুসলিম আছে প্রায় ১৮ লাখ, যার ১০ লাখ আছে আমি যেই প্রদেশে বাস করি- অন্টারিওতে। আর টরানটোর ডাউন টাউনে যেই শহরে আমি থাকি, সেখানে মুসলিমের সংখ্যা প্রায় ২ লাখ মতন।পুরো ক্যানাডার মাত্র ৫% মানুষ মুসলিম। হাতে গোনা কিছু মাসজিদ আছে এখানে। তবে আমার বাসা থেকে সবচে কাছের মাসজিদে যেতে সময় লাগে প্রায় ১ ঘণ্টার মতন। আসা যাওয়া আর নামায মিলিয়ে প্রায় ৩ ঘণ্টা। মাসজিদের শহর ঢাকা থেকে এসে আজ আমার এই অবস্থা। শুক্রবারেও যেহেতু অফিস থাকে, ৩ ঘণ্টা ছুটি নিতে একটু সমস্যায় পড়তে হয়। এরপরও আমি সাধ্য মতন চেষ্টা করি কখনো মিস না করতে।
আজকে জুমাতুল বিদাহ, তাই ছুটি নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। ৩ বার ট্রাম বা স্ট্রীটকার বদলাতে হয়। আজকে বছরের প্রথম একটু গরম পড়েছে, বাংলাদেশ থেকে আসা হাওয়া হয়তো।
একবার মাসজিদে পৌঁছায় গেলে খুব শান্তি লাগে। পৃথিবীর সব কোনা থেকে আসা মুসলিমরা সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এক সাথে দাঁড়াচ্ছি। অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করে। এখানে নারীদের নামাযের আলাদা জায়গা রয়েছে, তারাও আসেন। এখানে আপনার ধর্ম পালনের পূর্ণ অধিকার রয়েছে। হাতে গোনা কিছু ঘটনা ছাড়া রেসিসট ঘটনা তেমন ঘটে না। তেমনই এখানে হোমোসেক্সুয়ালদের শোভাযাত্রায় আপনাদের প্রিয় ট্রুড সাহেব এসে যেমন নাচানাচি করে, তেমনই আবার ঈদের দিন সালাম দিয়ে ঈদ মুবারাক ও বলে। যাহোক, বিতর্কিত বিষয়ে না যাই, যা বুঝাতে চাইছি তা হল সবাই এখানে যার যার মতন যা খুশি তাই করে। কেউ কিছু সমর্থন না করলে তা এড়িয়ে চলে, কিন্তু অন্যকে আক্রমণ করে না। আর কেউ কারো ক্ষতি না করলে আমার তেমন কিছু বলার নাই।
যাহোক, আজকে জুম্মার নামায পড়ে ভালো লাগলো। ইমাম সাহেব কিছু সুন্দর কথা বললেন, যা শুনে আমার মনের ভিতর কিছু চিন্তা আসলো যা আপনাদের সাথে শেয়ার করতে চাই। আমার ইসলামের নলেজ আপনাদের মতন এত বেশী না, আমি অতি নগণ্য এক বান্দা যে শুধু আল্লাহ্র সন্তুষ্টি চাই, সবার দুয়া চাই, কারো কোন ক্ষতি চাই না।
তাহলে বলেই ফেলি, ভুল কিছু বললে ক্ষমা করবেন। রামাদান হল পুরো বছরের একটা স্কুলের মতন, একটা শর্ট কোর্সের মতন। এই মাস আমাদের ভোরে উঠা শিখায়, যারা পুরো বছর নিয়মিত ফজর এর জন্য উঠতে পারিনা। আল্লাহ্র ইবাদাতের ভিতর যেই মানুষিক প্রশান্তি আছে, সেই স্বাদ ফিরিয়ে দেয়। সেই সাথে, খুব জরুরি একটা শিক্ষা দেয়, তা হল নিজের অন্তরের বাসনা বা desire কে বসে আনতে শিখায়। চিন্তা করলে দেখবেন যে এই পৃথিবীতে খাবারের চাহিদার কারণেই কিন্তু সব কিছু, এইটা প্রতিটি প্রাণীর সবচেয়ে প্রায়মারি চাহিদা। এরপরেই আসে তার সঙ্গীর সাথে একান্ত সম্পর্কের চাহিদা। আর রামাদান এই দুইটি চাহিদা বা desire কে বশে আনতে শিখায়। কারণ নাফসের চাহিদা বা desire কে আপনি কন্ট্রোল করতে না পারলে, এই desire গুলো আপনাকে কন্ট্রোল করবে। আর যেই মানুষ এই ২টি জিনিষ কন্ট্রোল করতে শিখে যায়, সে চাইলে তার নিজের জীবনের অন্য সব কিছু কন্ট্রোল করতে পারবে। সৎ কাজ করা, অসৎ কাজ থেকে নিজেকে দূরে রাখা, অন্যের হক না নষ্ট করা ... খুবই সিম্পল।
দ্বিতীয়ত, এই মাসে বেশি বেশি দান সাদাকাহ করা, অন্যের উপকার করার চেষ্টা করা, এই জিনিষ গুলো আমাদের আরও ভালো মানুষ হতে সাহায্য করে। আমাদের সমাজের মূল উদ্দেশ্য যেন আমরা সুখে দুখে একে অন্যের পাশে দাঁড়াতে পারি। আজ আপনি একজনের উপকার করছেন, কাল আপনার উপকারে দেখবেন আল্লাহ্ এমন জায়গা থেকে আপনার উপকার পাঠাবেন যা আপনি কল্পনাও করতে পারেন নি। এর সাক্ষী আমি নিজে।
পরিশেষে একটা খুব ইন্টারেস্টিং কথা দিয়ে শেষ করবো। আপনারা কি বলতে পারেন যে তাকওয়া জিনিষটা কি? আমিও এর definition বা শব্দের মানে বলতে পারবো যা থেকে আপনি বেশী কিছু বুঝবেন না, তাই একটা উদাহরণ দেই। কারণ তাকওয়া একটা জরুরি অস্ত্র যা আমাদের সঠিক সরল পথে থাকতে সাহায্য করবে।
ধরুন আমি যেমন আজকে একটা ক্যামেরা নিয়ে হাঁটছি, আপনাদের সকলকে যদি আমি একটা করে ক্যামেরা ধরিয়ে দেই, আর বলি যে আগামী ১ সপ্তাহ আপনি যেখানে যেখানে যাবেন, যা যা করবেন, সবকিছু এই ক্যামেরা দিয়ে রেকর্ড করতে হবে। আপনি কারো ব্যাপারে কি কি বলছেন, কি কি ভাবছেন, ভালো মন্দ সব কিছু। এরপর আপনাদের সবার ক্লিপ গুলো নিয়ে আমি একটা ভিডিও বানিয়ে পুরো পৃথিবীকে তা দেখাবো। সবাই যখন তা দেখবে, আপনি কি লজ্জিত হবেন নাকি গর্বিত হবেন? আমি আমার টা বলতে পারি, আমি খুব গর্ব করার মতন কিছুই করতে পারিনি এই জীবনে। আপনি কি লুকিয়ে লুকিয়ে ভালো কাজ করছেন যা দেখে পুরো পৃথিবী আপনাকে স্যালুট দিবে, নাকি এমন কিছু করছেন যা সবাই দেখে ফেললে আপনি লজ্জাই মুখ লুকাবেন?
আমাদের জীবনের গল্পটাও কিন্তু তাই, আমাদের চোখ দুটো হল ক্যামেরা লেন্স, কান দুটো রেকর্ডার। আর দুই কাঁধে যারা আছেন, তারা ত সব লিখে রাখছেনই, যদি আপনি তা বিশ্বাস করেন। এইটা খুব গভীর ভাবে চিন্তার বিষয় যে, আমাদের জীবনের গল্পটা যেদিন বিচার দিবসে পুরো পৃথিবীর সামনে সিনেমার মতন দেখানো হবে, আমরা কি গর্বিত হতে পারবো? এইটাই হল তাকওয়া, যার মানে হল সব সময় মাথায় রাখা যে আল্লাহ্ আমাকে দেখছেন। মেইক শিওর ইউ লিভ আ লাইফ ওয়ারথ শওিং টু এভ্রি ওয়ান এন্ড বি প্রাউদ অফ।
যাহোক, রামাদানের শিক্ষা পুরো বছর যেন আমরা সামনে বয়ে নিতে পারি আল্লাহ্ আমাদের সবাইকে সেই তৌফিক দান করুন। আমরা যেন শুধু উপোষ থাকা নয়, বরং এর থেকে কিছু শিক্ষা নিয়ে আমাদের জীবনে কাজে লাগাতে পারি। এই মাস আপনার হৃদয়কে ধুয়ে সাদা করে দিতে পারে। আপনি যখন একটা স্পটলেস সাদা জামা পড়ে থাকবেন, আপনি কিন্তু চেষ্টা করবেন যেন এই জামায় একটা দাগও না লাগে। এরপরও অনিচ্ছা সত্ত্বেও কিছু দাগ লেগে যাবে। আল্লাহ্ আমাদের আগামি রমজান পর্যন্ত সাদা হৃদয় সাদা অবস্থায় রেখে যেন আমরা আবারো নিজেদের পরিশুদ্ধ করে নিতে সেই তৌফিক দান করুন, আমিন।
আর আপনার এই কথা গুলো ভালো লেগে থাকলে, এর থেকে কিছু চিন্তার খোরাক পেয়ে থাকলে অনুরধ করবো সবার মাঝে রামাদাদের এই শিক্ষা গুলো ছড়িয়ে দিতে। তাহলে আমি আমার ক্ষুদ্র শিক্ষা গুলো চেষ্টা করে যাব ভবিষ্যতেও ছড়িয়ে দেওয়ার ইনশাল্লাহ।
আজকের মতন, আল্লাহ্ হাফেয।
Subscribe to Shopnil Mahmud
Get the latest posts delivered right to your inbox