Winter in Canada or Summer in Bangladesh? What's worse? Let's find out in Bangla
ক্যানাডার শীতকালের সবচেয়ে কঠিন ব্যাপার কি বলতে পারবেন? উত্তর ভাবতে থাকুন, আমি এই ভিডিওর শেষ দিকে আপনাদের এর সঠিক উত্তর জানাব। তবে একটা কথা বলতে পারি, আর তা হলো - এটি বছরের সেই ম্যাজিকাল সময় যখন প্রায় সবাই ভাবতে থাকে - আমি এই দেশে কি করছি? জি, এখানে যাদের জন্ম আর বেড়ে ওঠা সেই মানুষদের মুখেও আমি এই কথা গুলো বলতে শুনেছি। তাহলে আমাদের মতন উড়ে এসে জুড়ে বসা মানুষ কি বলবে বলুন? এই দেশটি এতটাই সুন্দর, যে আবহাওয়া এতো এক্সট্রিম না হলে পৃথিবীর সবচেয়ে সবচেয়ে জনবহুল দেশের একটি হতে পারতো এই ক্যানাডা।
আমাকে আবার ভুল বুঝবেন না, দেখতে এই দেশ শীতকালেও অতুলনীয়, একটা তুষারঝড়ের পরে যখন আকাশ পরিষ্কার হয়ে যায় তখন কতো সুন্দর লাগে আজ তাই আপনাদের ঘুরে দেখাতে বেরিয়ে পরলাম। বরফের চাদরে মোড়ানো চারপাশ, শ্বেত শুভ্র নির্মল। দালান গুলো দেখলে মনে হয় একেকটা বরফের দানব আকারের মূর্তি দাঁড়িয়ে আছে। আর মানুষগুলো সবাই প্যাকেট হয়ে আছে শীতের কাপড় দিয়ে। আমার নিজেকে কেমন যেন ব্যাটম্যান ব্যাটম্যান মনে হয়, বাইরে বের হলেই চড়াতে হয় ভারী এই ব্যাটসুট। মানুষের নিঃশ্বাস গুলো উড়ে যায় মেঘের ভেলা হয়ে। গাছ গুলো পাতা হারিয়ে আবার আপন করে নিয়েছে স্বর্গ থেকে উড়ে আসা তুষারের কনা গুলোকে। সূর্য দেখে যে কেউ ধোঁকা খেতে বাধ্য, কারণ এই সূর্যের তাপ এখানে গায়ে লাগে না। সূর্য মামার যত রংবাজি তা সব আমাদের বাংলাদেশের মতন গ্রীষ্ম প্রধান দেশ গুলিতেই। এরপরও শীতকালে সূর্য না থাকলে ভালো লাগেনা।
তবে তাপমাত্রা যখন মায়নাস ৩০ এর নিচে তখন বুঝবেন ঠাণ্ডা কি জিনিস! আপনার পুরো শরীরের সবকিছু ঢাকা থাকলেও চক্ষু জোড়া আর মুখ মনে হয় বরফে জমে যাচ্ছে। প্রচণ্ড গরম যেমন আমাদের চামড়া পুড়িয়ে ফেলে তেমনি আবার এরকম ঠাণ্ডাতেও আপনি পুড়ে যেতে পারেন। সেই সাথে ফ্রস্ট বাইট এর ভয় আছেই যাতে করে আপনার আঙুল বা শরীরের কোন অংশে চিরকালের জন্য প্যারালাইজড হয়ে যেতে পারে। আমি একবার একটা চাকরির ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে মাইনাস ৪০ এ আটকা পড়ে গেছিলাম এক নির্জন বাস স্টপে। আমি আধা ঘণ্টা ধরে বাসের অপেক্ষা করতে করতে যখন বুঝলাম এই আবহাওয়ায় সব বাস কান্সেল করে দিয়েছে তখন আর কোন উপায় না দেখে এই বরফের ভিতরেই দৌড়ানো শুরু করি। তা না হলে জমে মরে যেতাম। এরপর অনেক দূরে যাওয়ার পরে হঠাৎ অন্য কোন একটা বাস আসতে দেখে তাতে উঠে পড়ি ১ ঘন্টা বাইরে থাকার পরে। ওরকম সময়ে ১০ মিনিটের বেশি বাইরে থাকা উচিত নয়। বাস কই নিয়ে যাচ্ছিল আমি জানি না, আমার শুধু একটা শেলটার লাগতো। আশেপাশে যেহেতু কিছুই ছিলো না। আমার শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক হতে প্রায় আধাঘণ্টা সময় লেগে যায়। অবশ্য পরে আমার আর সেই চাকরি করা হয়নি। আরেকটি ভয়ের ব্যাপার হলো এই শীতে আপনার মোবাইল ফোন কাজ করা বন্ধ দিবে। ফুল চার্জ দিয়ে বের হলেও, চোখের নিমিষে ব্যাটারি শেষ হয়ে যায়। তখন আপনি যে সাহায্য চেয়ে কোথাও ফোন দিবেন, সেই উপায় আর থাকে না।
অবশ্য যাদের এখানে গাড়ি আছে, সেইসব বড়লোক মানুষদের কথা আলাদা। আমি এখনো কিনতে পারিনি কারণ আমাদের বাংলাদেশী দূতাবাসে আমার লাইসেন্স ভেরিফাই করতে দিয়েছিলাম আর তারা সেটি হারিয়ে ফেলেছে। এখানে লাইসেন্স পেতে আমাকে অপেক্ষা করতে হবে এখন থেকে আরও ৬ মাস। সে আরেক কাহিনী, বাংলাদেশী হিসেবে গর্বে বুকটা ফুলে উঠে।
যাহোক, ক্যানাডার শীত প্রসঙ্গে ফেরত আসি। ক্যানাডার শীতকালের আরেকটি ধোঁকা হলো- যেই তাপমাত্রা দেখানো হয় তা আসলে দেখাবার জন্য দেখানো। হয়তো আপনি দেখবেন মাইনাস ১০ কিন্তু বেরিয়ে এসে বুঝবেন ফিল হচ্ছে মাইনাস ১৫-২০। এর কারণ হলো বাইরের অসম্ভব ঠাণ্ডা বাতাস যা কিনা উইন্ড চিল বলে পরিচিত, সেই বাবাজি খেলা জমিয়ে রেখেছে। তাই ফিলস লাইক বা রিয়াল ফিল কত সেটাই আসল তাপমাত্রা। এই ব্যাপারে সব সময় খেয়াল রাখতে হবে।
তাহলে আমরা কি করে এর ভিতর বেঁচে থাকি? আসলে, একটা সময় পরে এসে আমাদের শরীর মানিয়ে নিতে শিখে যায়। এটা মানুষের সুপার পাওয়ার গুলোর একটি। তবে এই রকম শীতের সবচেয়ে বিরক্তিকর বিষয় হলো যখন দিনের পরে দিন সূর্যের দেখা পাওয়া যায়না। এমনো হয় যে টানা ১৫-২০ দিন সূর্যি মামা ছুটি কাটাতে চলে যান। আর ভিডিওর শুরুতে বলেছিলাম না যে সবচেয়ে কঠিন ব্যাপার কি? বলেন তো আপনার সাথে আমার কথা মিলে কিনা? আমার কাছে মনে হয় শীতকালের ব্যাপ্তিকাল বা লেংথ। যদি দুইমাস হতো তাহলে কিছু মনে হতো না। এখানে যদিও ঋতু বলা হয় ৪ টি। তবে এটা আরেকটা ৩ নাম্বারের ধোঁকা। কারণ বাংলাদেশে যেমন ষড় ঋতুর দেশ বলে প্রকৃতি আমাদের ধোঁকা দেয়, ২-৩ মাস বাদে পুরোটা বছরই তো ভাই গরম, এখানে ঠিক তেমনই ২-৩ মাস বাদে পুরো বছর শীত। বসন্ত আর শরতের আসল পরিচয় হলো উইনটার লাইট। তাপমাত্রা যখন ১০ এর নীচেই থাকে সচরাচর। খাতা কলমে এখন যেমন এখানে বসন্ত চলছে।
এখানে শীতের সময়ে মানুষের ভিতর এক রকম সিজনাল ডিপ্রেশন তৈরি হয়। এখানে আসার আগে এই নিয়ে হাসাহাসি করতাম বড়লোকের ভীমরতি মনে করে তবে এখন বুঝি এটা কেন হয়। ৯ মাস যদি আপনাকে বাক্সে বন্দী থাকতে হয়, তখন এক রকমের একাকিত্ব ভর করে, তখন মানুষিক অসুখ হওয়া অসম্ভব কিছু না।
তবে এখানকার সামার এত সুন্দর যে ঐ ৩-৪ মাসের জন্য অপেক্ষার পালে চড়ে কাটিয়ে দেওয়া যায় এরকম গুমোট ৭-৮ মাসের উইন্টার। আর মানুষকে আশাবাদী থাকতে হয়, আমরা স্বপ্ন বা অবলম্বন ছাড়া কি নিয়ে বাঁচবো? রাতের পরে দিন, আঁধারের পরে আলো আর শীতের পরেই গ্রীষ্ম, অন্তত ক্যানাডার ক্ষেত্রে এই কথা বলাই যায়।
এই ভিডিও দেখার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, ভালো লাগলে আশা করি এটি কাছের মানুষের সাথে শেয়ার করবেন। আরও বেশী বেশী ভিডিও দেখতে চাইলে সাবসক্রাইব করতে পারেন। ইন শা আল্লাহ্ খুব জলদি দেখা হবে, সেই পর্যন্ত ভালো থাকবেন, সর্বাঙ্গীণ ভাবে, সবসময়। আল্লাহ্ হাফেয।
Subscribe to Shopnil Mahmud
Get the latest posts delivered right to your inbox