/ YouTube Videos

Why Bangladeshi Celebs Are Desperate to be MP?

হোয়াইট হাউসের কঙ্কর বিছানো রাস্তায় পায়চারি করছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪০তম প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রেগন। শেষ কর্ম দিবসে রেগনের এক সহকর্মী ভেজা ভেজা চোখে এসে বলল, আমেরিকার ইতিহাসে আপনার মত কেউ আর আসবেনা!

১৯৮০’র দশকে সোভিয়েত ইউনিয়ন আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে যুদ্ধের হুমকি কমাতে বিশেষ কৃতিত্ব দেখিয়েছেন রেগন। সোভিয়েত নেতাদের তিনি বোঝাতে সক্ষম হয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ভালো সম্পর্ক থাকলে তাদেরই ভালো হবে।

বিশ্বরাজনীতির পট পরিবর্তনে এত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা যিনি রাখতে পেরেছিলেন সেই রোনাল্ড রেগন কিন্তু শুরুতে রাজনীতিবিদ ছিলেন না। জানলে অবাক হবেন, ক্যারিয়ারের শুরুতে তিনি ছিলেন হলিউডের ডাকসাইটের অভিনেতা। একজন অন্য অঙ্গনের মানুষ হয়েও যুক্তরাষ্ট্রের একজন সফল প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিজেকে প্রকাশ করতে পেরছিলেন তিনি।

রাজনীতিবিদ না হয়েও যারা আমাদের দেশের রাজনীতিতে ঢুঁকে পড়েন

এই গল্পটা দিয়ে আজকের কন্টেন্টটা কেন শুরু করলাম জানেন? বুক ভরা আফসোস নিয়ে। বিভিন্ন অঙ্গন থেকে আমাদের দেশেও রাজনীতিতে যুক্ত হবার প্রবনতা আছে। in fact, কয়েক গুণ বেড়েছে। কিন্তু দেশ ও দশের কথা ভেবে তাদের বেশীরভাগই রাজনীতিতে আসেনা। আসে আরও বিত্তবান হতে, আরও ক্ষমতাবান হতে। দিবালোকের মত সত্য, আমাদের দেশের রাজনীতি সুস্থ্য অবস্থায় নেই। ক্ষমতায় বসতে এখন আর মাঠের রাজনীতিতে নাম লেখাতে হয় না। বর্তমানে দেশের সাংসদ সিংহভাগই ব্যবসায়ী। আর তারা প্রত্যক্ষভাবেই যুক্ত। বাংলাদেশের অবস্থা এখন এমন যে রাজনীতি করছে ব্যবসায়ীরা আর ব্যবসা চালাচ্ছে রাজনীতিবিদরা। তবে শুধু ব্যবসায়ীরাই নয় রাজনীতিতে প্রবেশ করতে উঠেপরে লেগেছে অভিনেতা- অভিনেত্রী থেকে শুরু করে খেলার মাঠের অলরাউন্ডাররাও।

এবারের জাতীয় নির্বাচনের মনোনয়ন দেখলেই এই দৃশ্য আপনার কাছে পানির মতো স্বচ্ছ হয়ে যাবে। অভিনেতা থেকে শুরু করে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক বা বর্তমান অধিনায়ক সবাই আছেন তালিকায়। তবে তারা বেশ বুদ্ধির পরিচয় দিয়েই রাজনীতির মাঠে নেমেছেন। অন্য কোন দলের না তারা বেছে নিয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের প্রতীক। যেখানে হেরে যাওয়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। না ভাই, এটা মানতেই হবে। বাংলাদেশের এমপি ক্রিকেটাররা খুবই বুদ্ধিমান। ইমরান খানের মত অতটা বোকা তারা না। দেশের রাজনীতির এখন এমনই অবিশ্বাস্য অবস্থা যে রাজনীতিতে যুক্ত হতে খেলোয়ার তার খেলা ছেড়ে দিচ্ছেন, শিক্ষক শিক্ষকতা ছেড়ে দিচ্ছেন, চাকরিজীবি তার চাকরি ছেড়ে দিচ্ছেন। এমনকি, রিয়াজ-ফেরদৌসরা অভিনয় করাটাও বন্ধ করে দিয়েছেন।

এমপি হওয়ার এত খায়েস কেন তাহাদের?

কিন্তু কেন নিজ পেশার সফল ক্যারিয়ার ছেড়ে, রাজনীতি করতে সবাই কেন এত মরিয়া? জনগনের সেবা? নাকি ক্ষমতার অপব্যবহার আর নিজের স্বার্থসিদ্ধি! ফুলে ফেঁপে কলাগাজ থেকে তালগাছ হবার বাসনা? চলুন আজকের পর্বে এইসব মহান রাজনীতিবিদ দের একটু ধুয়ে দেই।

একটা সময় ছিলো যখন সাধারণ জনগন রাজনীতিবিদদের সম্মান করতেন। মওলানা ভাসানীর কথাই ধরুণ। এত সম্মান তিনি অর্জন করেছিলেন রাজনৈতিক ভূমিকার কারণেই। টাকা পয়সা উপার্জন করা কিংবা ক্ষমতাবান হওয়া তার রাজনীতির উদ্দেশ্য ছিলোনা। একটা সময় পর্যন্ত বাংলাদেশের রাজনীতিতে মন্ত্রী-এমপি হতে অনেক কাঠখর পোড়াতে হতো। কিন্তু এখনকার রাজনীতিতে সংসদ সদস্য হতে চাইলে দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার বা অভিজ্ঞতার প্রয়োজন হয় না। এখনকার এমপিদের সংজ্ঞা পাল্টে গেছে। বিত্তশীল ব্যবসায়ী, পর্দার জনপ্রিয় তারকা কিংবা খেলার মাঠের পরিচিত মুখই এখনকার সংসদ সদস্য। সেক্ষেত্রে অবশ্য তৈলমর্দন কারী ক্ষন্ডকালীন নেতারাই বেশী সুবিধা ভোগ করছে। সবচেয়ে দুঃক্ষজনক হচ্ছে এদের রাজপথের রাজনীতি নিয়ে তেমন কোন ধারণা নেই। নেই সাধারণ মানুষের সাথে তেমন কোন সংযোগ। ক্ষমতাসীন দল থেকে মনোনয়ন নিয়ে, সুযোগ বুঝে বসে পড়েছেন বড় বড় চেয়ারগুলোতে।

রাজনীতিতে ব্যবসায়ীদের অবদান

প্রথমেই আসা যাক ব্যবসায়ীদের রাজনীতিতে আসার প্রবণতার দিকে। ২০১৯ সালের একাদশ জাতীয় নির্বাচনে সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেওয়া ১৮২ জন সাংসদ ছিলেন ব্যবসায়ী। এই সংখ্যা থেকে বোঝায় যায় দেশের রাজনীতিতে ব্যবসায়ীদের প্রভাব কতটা। বহু বছর আগে থেকেই রাজনীতিতে ব্যবসায়ীদের অংশগ্রহণ ছিল। তবে তারা ব্যবসা করতেন পরোক্ষভাবে।

এই অংশগ্রহণ যে শুধু বাংলাদেশে তা কিন্তু না। পৃথিবীর অনেক দেশের ক্ষমতার রাজনীতিতে ব্যবসায়ীদের বিচরণ লক্ষ্য করা যায়।

১৭৮০ সালে আমেরিকানদের এক যুদ্ধে স্বদেশপ্রেমের পরিচয় দেয় আমেরিকান বণিকরা। ব্যবসায়ী গোষ্ঠী নিজেরা তহবিল সংগ্রহ করে রসদ যোগান দেন। প্রায় হেরে যাওয়া যুদ্ধে আবার প্রাণ ফিরে আসে। জয়ের মুখ দেখে মার্কিন সেনারা। এরপর ১৮১২ সালে গ্রেট ব্রিটেনের সাথে যুদ্ধ জড়িয়ে পড়ে যুক্তরাষ্ট্র। সেই যুদ্ধেও অর্থের যোগান দেয় ব্যবসায়ী শ্রেণি।

শুধু যুদ্ধ নয়, গত কয়েক শতাব্দী ধরে দেশের শিক্ষা খাত ও অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে ভূমিকা রেখেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদশালী অনেক ব্যবসায়ী নাগরিক। তাদের এ অর্থনৈতিক অবদানের কারণেই আজকের দুনিয়ায় সুপারপাওয়ার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

একই চিত্র চীন বা আমাদের পাশ্ববর্তী দেশ ভারতের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। ভারতে বিদ্যুৎ ব্যবহার করা প্রথম হোটেল তাজ। যার মালিকানা টাটা কোম্পানির। নিজেদের মুনাফার সঙ্গে সঙ্গে টাটা গ্রুপ সচেতনভাবে ভারতের আর্থসামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রেখেছে। এশিয়ার প্রথম ক্যান্সার হাসপাতালও তাদের হাতেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু তারা কেউই সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে যুক্ত হননি।

বাংলাদেশেও সরাসরি ব্যবসায়ীদের রাজনীতিতে অংশগ্রহণ ছিল না। দেখা যেত তারা ভিন্ন ভিন্ন দলকে বিভিন্নভাবে সাপোর্ট করতো। বা কোন প্রার্থীকে নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে অর্থ দিয়ে সাহায্য করতো। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় তারা যুক্ত হয়েছে প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে। তাদের এই রাজনীতি প্রবেশ করা কী শুধু জনকল্যাণের স্বার্থে। নাকি অন্য কোন অসৎ উদ্দেশ্য রয়েছে অগোচরে?

বাংলাদেশে ব্যবসায়ীরা কেন রাজনীতিতে নামতে মরিয়া?

সম্প্রতি বাংলাদেশে অতি ধনীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। যারা ধনী তারা আরো বেশি ধনী হচ্ছে। আরেকটা বিষয় লক্ষণীয় যে যারা ক্ষমতার কাছাকাছি থাকেন তারাই ধনী হচ্ছেন। অর্থাৎ ক্ষমতায় একপ্রকার অর্থ। একজন শিল্পপতি বা ব্যবসায়ী তার ব্যবসায়ে মনোযোগ না দিয়ে ব্যস্ত আছেন রাজনীতি নিয়ে। এখানে কী অর্থ উপার্জনের কোন রহস্য লুকিয়ে আছে? নাকি কালো টাকা সাদা করার কোন উপায় আছে! নাকী ব্যাংক খালি করার গোপন ফর্মুলা পাওয়া যায় এখানে?

প্লেটো তাঁর ‘রিপাবলিক’ গ্রন্থে আদর্শ রাষ্ট্রের চিত্রে ব্যবসায়ীদের রাজনীতি করার অধিকার রাখেননি। কারণ যার যে কাজ, তার সে কাজই করা উচিত। ব্যবসায়ীরা যেকোন কাজে অর্থ বিনিয়োগ করে সেখান থেকে লাভের আশা করেন। তারা জনগণের কল্যাণে হাসপাতাল তৈরি করুক বা শিক্ষার প্রসারে স্কুল – কলেজ; সব জায়গায় তারা লাভ খোঁজেন। তাহলে কী রাজনীতিতে তাদের পা বাড়ানোর মূল উদ্দেশ্য অর্থ উপার্জন!

কিন্তু অর্থ উপার্জনের এত এত পথ থাকতে রাজনীতিতেই কেন আসতে হবে। কারণটা খুব সহজ। এখানে আসলেই পেয়ে যাচ্ছেন ক্ষমতা। সাথে বিলাসবহুল বাড়ি, করবিহীন গাড়ি, কম দামে প্লট তো আছেই। আবার আগে রাজনীতিতে যে চাঁদা দিতে হতো সেটাও দিতে হয় না। ফলে পুরো চিত্র পাল্টে যাচ্ছে। তাদের শুধু লাভ আর লাভ। চলনে বলনে, মাফিয়া মাফিয়া একটা ভাব!

বাংলাদেশে তারকারা কেন রাজনীতিতে নামতে মরিয়া?

এবার আসা যাক তারকাদের কথায়। তারা কেন নিজের জায়গা ছেড়ে এখানে? ক্রিকেট তারকা বা অভিনেতা- অভিনেত্রীদের রাজনীতিতে যোগ দেওয়া বা সংসদ সদস্য হওয়ার চেষ্টার মধ্যে কোনো ভুল নেই। দেশের অন্যান্য নাগরিকদের মতো তাদেরও সেই অধিকার আছে। আমাদের পাশের দেশ ভারতেই ভূরি ভূরি উদাহরণ আছে। তারা কখনো কখনো বিতর্কিত, আবার কখনো হাস্যরসও তৈরি করেন। অনেকেই আবার ভালো কাজ করছেন। দেশের এবারের নির্বাচনে চিত্রনায়ক ফেরদৌস, নতুন করে মনোনয়ন পেয়েছেন । এছাড়া আসাদুজ্জামান নূর এবং মমতাজ আগে থেকেই সাংসদ আছেন। দেশ ও দশের খাতিরে তাদের অবদান কতটা , কষ্ট করে আপনারাই জানাবেন!

এবারের নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আছেন ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। একাদশ জাতীয় নির্বাচনে নিজ জেলা নড়াইল থেকে এমপি নির্বাচন করেছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। নিঃসন্দেহে জনগণের সেবা করার একটি বড় সুযোগ হলো, রাজনীতিতে যুক্ত হওয়া। কিন্তু এরা যে শুধু জণকল্যাণে কাজ করতেই রাজনীতিতে এসেছেন সেটি কী এক বাক্যে বলা যায়?

ব্যবসায়ী সাকিব, খেলোয়াড় সাকিব নাকি এমপি সাকিব?

সাকিব এই মুহুর্তে বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় মুখ। হয়তো তিনি এই জনপ্রিয়তাকে ধরে রাখতেই রাজনীতির ময়দানে এসেছেন। কিংবা হতে পারে ক্ষমতার ব্যবহার। জেনে বুঝে সাকিব যোগ দিয়েছেন ক্ষমতাসীন দলে, যেখানে তার জয় একপ্রকার নিশ্চিত। কিন্তু সাকিব কী পারতেন না খেলোয়াড় সাকিবই থেকে যেতে বা এই অঙ্গনেই অন্য কোন ভূমিকা পালন করতে। দেশের ক্রিকেটের মান উন্নয়নে তিনি চাইলেই কাজ করতে পারতেন। এমন একজন অলরাউন্ডার খেলোয়াড় তো আমাদের দলের কিংবা অন্য কোনো দেশের কোচ হিসেবে নিজেকে মেলে ধরতে পারতেন। কিন্তু সাকিব তা করেননি। এমপি হওয়ার লোভে তিনিও চলে এসেছেন রাজনীতিতে।

সবার এমন এমপি হতে চাওয়ার মধ্য দিয়ে এটা স্পষ্ট যে, আমাদের রাজনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক-অর্থনৈতিক বাস্তবতা এমন একটা পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে যে, ক্ষমতাই সব!

ব্যবসাবন্ধব সংসদ দেখে সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এক ভাষণে আক্ষেপ করে বলেছিলেন, ‘এ অবস্থা চলতে থাকলে হয়তোবা সংসদে বিল আকারে উপস্থাপিত আইনের মূল্যায়ন করতে বাইরে থেকে বিশেষজ্ঞদের আমন্ত্রণ জানাতে হতে পারে।’মন্দ বলেননি তিনি। ব্যবস্যায়ী,খেলোয়ার,গায়ক আর অভিনতাদের দিয়ে আর যাই হোক আইনের সূক্ষ্ম মূল্যায়ন করানো কঠিন কাজ।

উপসংহার

গণতান্ত্রীক ও অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী দেশগুলোর কথাই ধরুণ! যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের সদস্যদের মধ্যে মাত্র ৩৮ শতাংশ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত, ব্রিটিশ পার্লামেন্ট হাউস অব কমন্সে এই হার ২৫ শতাংশ। প্রতিবেশী দেশ ভারতের দিকে তাকালে আরও অবাক হবেন। বর্তমান লোকসভায় মাত্র ২০ শতাংশ ব্যবসায়ী এমএলএ বা বিধান সভার সদস্য। সেখানে আমাদের দেশে সংসদে প্রায় ৬১ শতাংশ সাংসদই ব্যবসায়ী। আর এই সংখ্যা দিন দিন বাড়ছেই। এর শেষ যে কোথায় সেটা আমরা কেউ জানি না।

Search of Mystery

Search of Mystery

A YouTube channel representing Bangladesh and bringing mysteries behind the stories. We're activists and defenders of the truth.

Read More