/ YouTube Videos

Why 85% People Aren't Satisfied with Jobs?

চাকরিটা আমি পেয়ে গেছি বেলা শুনছো! এখন আর কেউ আটকাতে পারবে না!

অঞ্জন দত্তের বিখ্যাত এই গানটির আবেদন বোঝে সে যার দুনিয়া স্থবির হয়ে আছে একটি চাকরির অপেক্ষায়। জীবনের সকল চাওয়া পাওয়ায় সত্যিই থমকে যায় একটি চাকরির কাছে। মিথ্যা কথার এই শহরে প্রিয় মানুষের সাথে ঘর বাঁধার স্বপ্নটাও আটকে যায় শত সহস্র তরুণের।

কিন্তু যে চাকরির অভাবে শত সহস্র অঞ্জনের জীবন থেকে হারিয়ে গেছে তাদের বেলা বোস, সেই চাকরি করতে গিয়েই নাকি ৮৫ শতাংশ মানুষ অসন্তুষ্ট। শুধু তাই নয়, এই এত সংখ্যক মানুষ রীতিমতো তাদের চাকরিকে ঘৃণা করে।

এক জরিপ দেখা গেছে, বিশ্বের এক বিলিয়ন ফুল-টাইম কর্মীদের মধ্যে মাত্র ১৫ শতাংশ লোক কর্মক্ষেত্রে সন্তুষ্ট থাকে। বাকি সবাই তাদের কাজ নিয়ে মোটেও খুশি নন। তারপরও চাকরি আমাদের কাছে সোনার হরিণ। সরকারি চাকরি হলেতো কথাই নেই। চাকরি নিয়ে আমাদের চর্চাটা আসলে কেমন? Ar চাকরি নিয়েও আমরা কেন সুখী নই।

এই গ্রহের যে প্রান্তেই চাকরি করুণ না কেনো, আপনি নিজে বস না হলে আপনার একজন বস আছে নিশ্চিত। তাহলে চলুন, সেই বসকে দিয়েই আলাপটা শুরু করি। বলা হয়, বস ভালো তো সব ভালো। আসলেই প্রতিষ্ঠানের একজন ভালো ম্যানেজারই পারে তার পুরো টিমকে জমিয়ে তুলতে। যদি বস আপনার পছন্দের ব্যক্তি হয়ে ওঠেন তাহলে সেই অফিস আপনার কেছে স্বর্গের মত মনে হবে। একটু অন্যভাবে বললে, পুরুষেরা তখন ঘরের চেয়ে অফিসে সময় কাটাতেই বেশী স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। কিন্তু, মনের মত বস যদি ভাগ্যে না জোটে, তাহলে তো সেরেছে। চাকরি-বাকরি ছেড়ে সন্যাসি জীবন বেছে নিতেও পিছপা হবেন না আপনি।

সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে কোনো ভাবেই অফিসে যেতে ইচ্ছে হবে না আপনার। আর কোন মতে অফিসে গেলেও অপ্রিয় বসের সামনে আপনি কোনভাবেই যেতে চাইবেন না। যত যাই বলি, মাথায় রাখবেন চাকরির ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছেন প্রতিষ্ঠানটির বস। তার অধীনেই কর্মচারীরা কাজ করেন। একজন ভালো বস যেমন তার কর্মীদের সঠিক দিক নির্দেশনা দেন তেমনি একজন খারাপ বসের আচরণের কারণে কর্মীরা তাদের মনোবল হারান।

এক গবেষণায় দেখা গেছে ৭৫ ভাগ আমেরিকান নাগরিকের কর্মক্ষেত্রে চাপের কারণ তাদের বস। কুয়ার্টজ ম্যাগাজিনে প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়েছে যে, একজন কর্মীর জন্য তার বস ধূমপানের চেয়েও ক্ষতিকর হতে পারেন। অতএব, বুঝতেই পারছেন, চাকরিটা আপনার কেনো ভাল্লাগেনা! ঘেটে দেখতে পারেন, কারণটা হয়ত, ওই জাদরেল বস!

একইভাবে অফিসে আপনার পাশের ডেস্কে বসা সহকর্মীদের কথা ভাবুন। তাদের সাথে আপনার সম্পর্ক ঠিক - তাহলে আপনার কোন কাজই কঠিন হবে না। অফিসের পুরো সময়টা আনন্দের সাথেই কেটে যাবে। কিন্তু কোনভাবে যদি বেশিরভাগ সহকর্মী আপনার অপছন্দের তালিকায় চলে যায় তাহলে কিন্তু বিপদ। অফিস হয়ে উঠবে আপনার সবচেয়ে অপছন্দের জায়গা। ও হ্যা, অফিস পলিটিক্সের ব্যাপারটাও মাথায় রাখবেন। এদের ফাপরে পড়লে কিন্তু শেষ। আপনার চাকরির জীবন বিষিয়ে তুলতে এরাই যথেষ্ট।

এবার আসা যাক অফিসের কাজের কথায়। প্রতিদিন একই কাজ করতে করতে বিরক্ত কর্তাকে শান্তনা দেবার মত ভাষা আমার কেছে নেই।এযে কী কঠিন কাজ, ব্যাংকার বন্ধু থাকলে তাকে জিজ্ঞেস করবেন। কাজের বিনিময়ে পারিশ্রমিক পান আর সেটা দিয়ে জীবন চলে ঠিকই, কিন্তু একগেঁয়েমি কাজে কোন সুখ বা স্বাচ্ছন্দ্য থাকে না। আর এখান থেকেই কাজের প্রতি অনীহা তৈরি হয়। একটা পর্যায়ে সেটা বিরক্তিতে রূপ নেয়।

অনেক প্রতিষ্ঠানের মালিকপক্ষ তো ভুলেই যায় কর্মীদের ব্যক্তিজীবনের কথা। অফিসে ফুল টাইম কাজ করার পরও অনেক সময় বাড়িতেও বিভিন্ন কাজ চাপিয়ে দেওয়া হয়। তাদের আশা এমন থাকে যে কর্মীরা ২৪ ঘণ্টায় কাজে নিয়োজিত থাকবে। কিন্তু এতে করে কর্মীদের কী অবস্থা হয় সেটা তাদের নজরে থাকে না। কর্মীদের মানসিক স্বাস্থ্য খারাপ হতে থাকে। এক পর্যায়ে তারা হতাশ হয়ে যায়। চাকরির প্রতি বিরক্তি চলে আসে। দিয়ে বসেন ইস্তফা।

জীবনের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ সময় কিন্তু আমরা চাকরির পেছনে ব্যয় করি। যা এক করলে হয় প্রায় নব্বই হাজার ঘণ্টা। আবার সেই চাকরির পিছনে মানে অফিসে যেতে আসতেও চলে যায় অনেক সময়। ধরুন আপনার বাসা থেকে অফিসে যেতে ২ ঘণ্টা সময় লাগে। যে কাজ করতে আপনার ভালোই লাগে না সেই কাজ করতে আপনাকে পাড়ি দিতে হয় দীর্ঘ এক পথ । তাহলে ভাবুন, এমন জার্নি করে অফিসে যাওয়ার পর কাজে মন দেয়া কী সম্ভব?

আমাদের মস্তিষ্ক একটা 'অনুমাননির্ভর ইঞ্জিন' এর মতো। ভবিষ্যতে কি হবে তা মস্তিষ্ক আগে থেকেই সঠিকভাবে অনুমানের চেষ্টা করে। কিন্তু মস্তিষ্ক যখন বার বার চেষ্টা করেও এই অনুমানে ব্যর্থ হয়, তখনই আত্মবিশ্বাস কমতে থাকে। তখন থেকেই ভাজ পড়তে থাকে কপালে, বাড়তে থাকে দুশ্চিন্তা আর উদ্বেগ। আর যখনই আমরা আগামীতে কী হবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তায় থাকি, তখনই আমাদের মস্তিষ্ক নিস্ক্রিয় হতে শুরু করে। তখন মনে হয়, এত ঝামেলার চেয়ে চাকরি না করাই ভালো!

তবে এই সিদ্ধান্ত নেয়াটা সব সময় সবার জন্য এত সহজ না। সবাই কিন্তু তাদের অপছন্দের কর্মক্ষেত্র থেকে বের হয়ে আসতে পারে না! দুর্ভাগ্যক্রমে বেশিরভাগ মানুষই তার চাকরি ছাড়তে পারে না। বছরের পর বছর অপ্রিয় চাকরিই তাকে করে যেতে হয়। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি কাজ করে দায়িত্ববোধ। সংসারের বোঝা তো আর কাঁধ থেকে সহজেই নামানো যায় না।

এছাড়াও অপছন্দের চাকরি না ছাড়ার আরেকটি বড় কারণ হল বেতন। অফিসের সবকিছু খারাপ লাগলেও মাস শেষে একটা ভালো পারিশ্রমিক কার না ভালো লাগে। তখন আর এত এত সমস্যার কথা মাথায় আসে না। তাছাড়া, চাকরি ছেড়ে দিয়েই কী লাভ? নতুন চাকরি পেয়ে যাওয়ার কোনো নিশ্চয়তা আছে? অন্তত বাংলাদেশে তো নেই। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ তথ্য বলছে দেশে বর্তমানে বেকারের সংখ্যা ২৫ লাখ। আর এটি প্রতিনিয়ত বাড়তেই আছে। একই সাথে দেশের চাকরির বাজারে যে অবস্থা, তাতে করে এক একটি চাকরি যেন সোনার হরিণ। তাইতো কষ্ট হলেও মানুষ চাইলেই চাকরি ছেড়ে দিতে পারে না। আর ছেড়ে অন্য প্রতিষ্ঠানে গেলেই যে সেটা ভালো হবে তারও তো কোন নিশ্চয়তা নেই।

আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে একটি শ্রেণি অব্যাহতভাবে দুর্নীতি চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশে এখন এমন একটা জায়গা নেই যেখানে নিয়োগে দুর্নীতি নেই। এক্ষেত্রে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির নিয়োগের ক্ষেত্রেই অনিয়ম, স্বজনপ্রীতির অভিযোগ বেশি। যেখানে চাকরি প্রত্যাসীদের চাপ সবচেয়ে বেশী। ২০২০ সালে প্রকাশিত এক তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে সরকারী কর্মচারী আছে ১৫ লাখ ৪ হাজার ৯১৩ জন। যাদের মধ্যে প্রথম শ্রেণির প্রায় ২ লাখ, দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মচারীর সংখ্যা দেড় লাখের উপরে। তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীর সংখ্যা ছিলো প্রায় ৯ লাখ যা মোট জনবলের প্রায় ৬০ শতাংশ। এবং চতুর্থ শ্রেণির পদে কর্মরত আছেন আড়াই লাখের মত।
একটি গবেষণায় দেখা গেছে, গড়পড়তা ৩০ বছরের চাকরি জীবনে প্রায় সব কর্মকর্তা-কর্মচারীই চান তার অন্তত একজন স্বজন চাকরি পাক। একটু খেয়াল করলেই দেখবেন, সরকারি একজন চাকরিজীবি নিজের ছেলে-মেয়ে থেকে শুরু করে শালা-শালী-দুলাভাইকেও চাকরির ব্যবস্থা করে দেন।

অনেকেই ভাবেন বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস বা বিসিএস-এ অনিয়মের কোনো সুযোগ নেই। সুযোগ একেবারেই যে নেই তা কিন্তু না। বিসিএসে মৌখিক পরীক্ষায় ২০০ নাম্বার বরাদ্দ থাকে যেখানে আগে ছিলো ১০০। বিসিএসের মতো বিভিন্ন মন্ত্রণালয় তাদের দপ্তরের পরীক্ষায়ও বেশি নম্বর মৌখিকের জন্য বরাদ্দ রাখে। এতে অনিয়মের দুয়ার একটু হলেও খুলে যায়। চাকরি নিয়োগে দুর্নীতির কারণে বহুমুখী সমস্যা তৈরী হয়। স্বজনপ্রীতি, অস্বাভাবিক দুর্নীতি, তদবিরের ভয়ে অনেক ক্ষেত্রে পদ শূন্য থাকলেও নিয়োগ কর্তারা চাকরির বিজ্ঞপ্তিই দিতে চান না। গত দশ বছরের কথাই ধরুন, বাংলাদেশে শূন্য পদের সংখ্যা এই সময়ের মধ্যে আড়াই লাখের নিচে নামেনি। সরকারও এক বছরে হাজার পঞ্চাশের বেশী মানুষকে চাকরি দিতে পারছেনা। তাহলে ? চাকরির সিস্টেমটাই আমাদের দেশে এমনভাবে গড়ে উঠেছে যেখানে আপনকাকে চাকরি পেতেও ভুগতে হবে, চাকরি পেয়ে গেলেও ভুগতে হবে। অগত্যা আপনার বেলাবোস সান্তনা দিয়ে লাভ নেই। কেউ পারুক বা না পারুক, চাকরি আপনাকে আটকে দেবেই।

কর্মজীবনে ঢোকার আগেই আমাদের সামনে এত এত সমস্যা এসে হাজির হয় যে আমরা আমাদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটা সময় কাটিয়ে দেই হতাশায়। এর থেকে মুক্তির কী পথ নেই? অবশ্যই আছে। দুর্নীতির চক্র ভেঙে দিতে হবে। সরকারী-বেসরকারী সব স্তরেই স্বজনপ্রীতির আধিক্য নির্মুল করতে হবে। সব স্তরের চাকরির নিয়েগে সচ্ছতা আনতে হবে। কিন্তু কে করবে এসব কাজ? কমেন্টে জানান আপনার মতামত। জনমত তৈরীতে সাহায্য করুণ। আমি, আপনি, আমরা সবাই এক না হলে এই চক্রকে ভাঙা যাবে না। এক না হলে চাকরী জীবনেও স্বস্তি পাওয়া যাবেনা।

Search of Mystery

Search of Mystery

A YouTube channel representing Bangladesh and bringing mysteries behind the stories. We're activists and defenders of the truth.

Read More